আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
এ,কে,আজাদ (বিশেষ)প্রতিনিধিঃএকটি ফোন, কেড়ে নিবে একটি জীবন। ফোনটি পেয়েই নতুন দুটি গামছা দিয়ে হাত পা বাঁধা হয়েছে ছেলেটির। মুখে লাগানো হয়েছে আঠালো টেপ। দুইটি নতুন চকচকে ছুরি প্রস্তুত, করা হবে শিরোচ্ছেদ। আশপাশে কেউ নেই, সামনে দন্ডায়মান ঘাতক। হোটেলের ৩০৪ নম্বর কক্ষটির দরজা বন্ধ করা হয়েছে শক্তভাবে। অপেক্ষা আরেকটি ফোনের। ফোনে নির্দেশ পেলেই হত্যা করা হবে একাদশ শ্রেনির মেধাবী ছাত্র সাকিবকে। সাকিবের সামনে এখন শুধু একটিই পথ, মৃত্যু।
দরজায় সজোরে নক করে কেউ দরজা খুলতে বলছে। সাকিব এবার ভাবে তার মুক্তিদাতা এসেছে তাকে মুক্তি দিতে। খুনি ভাবে এসেছে তার সহযোগি কেউ খুনের সহযোগিতা করতে। আচমকা থমকে যায় কক্ষটির কার্যক্রম। এতক্ষণ সাকিবের যতটা আতঙ্ক আর ঘাতকের মাথায় খুনের নেশা চেপেছিল তা মুহুর্তেই যায় থেমে। আবার দরজায় নক করে “দরজা ভেঙ্গে ফেলবো, তাড়াতাড়ি দরজা খোল, আমরা পুলিশ।” শব্দগুলো শুনে সকিবের চোখে বেঁচে থাকার স্বপ্ন জাগে, ঘাতকের দু’চোখে অন্ধকার। দরজা খুলতেই সাকিব ঝাপিয়ে পড়ে পুলিশের বুকে। গ্রেফতার করা হয় খুনি হোসাইনকে। তবে ঘটনার আড়ালের খবর আড়ালেই থেকে যায় হোসাইনের কাছে। এসি মঈনুল একাই ছিলেন এ অভিযানে। যদিও তিনি সেখানে বলেছেন হোটেলের চারিপাশ পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আসলে আশেপাশে অন্য কোন পুলিশই ছিল না।
ঘটনা চট্রগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানা এলাকার। গত ১০ জানুয়ারি ভোরে সাকিব বাড়ি থেকে বের হয় প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে। পথে অস্ত্রের মুখে অপহরণের শিকার হয়। অপহরণকারীরা পূর্ব থেকেই অপেক্ষায় ছিল সাকিবের জন্য। একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় লোহাগড়া থানার দূর্গম নাপাটিলা এলাকার একটি মৎস্য খামারে। দুপুরে সাকিবের নম্বর থেকে অপহরণকারীরা ফোন দেয় সাকিবের বাবার মোবাইল নম্বরে। চাওয়া হয় ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ, পুলিশকে জানালে পাওয়া যাবে ছেলের লাশ। তবুও অসহায় বাবা ছুটে যায় পুলিশের কাছে। কারণ বিপদগ্রস্থ অসহায় মানুষের কাছে আস্থার জায়গা ওই একটিই। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পুলিশের একাধিক চৌকষ টিম কাজ শুরু করে। অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু আসামি এবং ভিকটিমের অবস্থান বারবার হয় পরিবর্তন। ১৩ জানুয়ারি, একটি সূত্র থেকে ৩০৪ নম্বরের একটি তথ্য পায় পুলিশ। কিন্তু কোন হোটেল তা জানতে পারেন না তারা। একাধিক টিম খুঁজতে থাকে চট্টগ্রাম এলাকার সকল হোটেলের ৩০৪ নম্বর কক্ষ। সর্বশেষ সিএমপি ডিবির এসি মঈনুল ইসলাম লোহগড়া থানার বটতলী আমিরাবাদ এলাকার এমকে বোডিং এর ৩০৪ নম্বর কক্ষে এভাবেই খুঁজে পান ভিকটিমকে। উদ্ধার হয় খুনের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা নতুন গামছা. মাফলার ও ২টি ছুরি। নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় ভিকটিম সাকিব।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সাকিবের আপন খালাত ভাই জাহাঙ্গীর এ অপহরণ ঘটনার মূল কারিগর। তবে তাকে উৎসাহ যুগিয়েছে তাদের উভয়ের আরেক নিকট আত্মীয়। জাহাঙ্গীর এ ঘটনায় যুক্ত করে আরো কয়েকজন সহযোগি। ৩৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া করে একটি মাইক্রোবাস। মুক্তিপণের টাকার ভাগও হবে কার্যক্রমের ভূমিকার আনুপাতিক হারে। তবে যে আত্মীয় জাহাঙ্গীরকে উৎসাহ জুগিয়েছে, তার উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র ভিকটিম সাকিবের মাকে উচিৎ শিক্ষা দেয়া। ঘটনা যে পরবর্তীতে এভাবে খুন পর্যন্ত গড়াবে সেটা তার জানা ছিল না। ১৪ জানুয়ারি গ্রেফতার হয় মূল আসামি জাহাঙ্গীর। আসামি হোসাইন ও জাহাঙ্গীর বিজ্ঞ আদালতে দিয়েছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। শুধুমাত্র পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপ, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের কারণে একটি জীবন ফিরে এলো মৃত্যু দুয়ার থেকে। সাকিবের পরিবার ও সংশ্লিষ্টরা সাধুবাদ জানিয়েছেন পুলিশের এমন কার্যক্রমে।